Translate

MORE

Wednesday, December 21, 2022

স্মরনিয় কয়েকজন গণিতবিদ

 

স্মরনি কয়েকজন গণিতবিদ :

 

প্যারি ডি ফার্মা

প্যারি ডি ফার্মা (1601-1665) একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। তার অসাধারণ দ্রুত গণিতের উদ্ভাবনী শক্তি তাকে উচ্চতর গণিত এনালাইটিক্যাল জ্যামিতিতে গভীরভাবে অবদান রাখতে সাহায্য করে। তিনি যখন বলতেন, তার কাছে গণিতের কোনো সমস্যার প্রমাণ আছে, তার কাছে সত্যি একটি নির্ভুল প্রমাণ থাকতো। তিনি ব্লেস প্যাসকেলের সাথে প্রোবাবিলিটি থিউরির ভিত্তি স্থাপন করেন। তার সংজ্ঞায়িত Fermat's Last Theorem প্রমাণ করতে প্রায় সাড়ে তিনশত বছর লেগে যায় এবং নাম্বার থিউরির অনেক উন্নয়ন হয়।

 

ব্লেস প্যাসকেল

 ব্লেস প্যাসকেল (1623-1662 ) 1645 সালে প্রথম ক্যালকুলেটিং মেশিন উদ্ভাবন করেন। তার নাম ব্যবহার করা হলেও তিনি আসলে নাম্বারের ট্রায়াঙ্গুলার অ্যারে (Triangular Array of Numbers) উদ্ভাবন করেননি। কিন্তু তিনি ট্রায়াঙ্গুলার অ্যারে এবং বাইনোমিয়াল এক্সপানশনের মধ্যে সম্পর্ক দেখেছিলেন। তিনি অ্যারে এবং কম্বিনেশনাল প্রবলেমের মধ্যে যোগাযোগটা বের করেছিলেন।

 

আইজ্যাক নিউটন

 আইজ্যাক নিউটনকে (1642-1727) ইংরেজি বিশ্বে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী-গণিতবিদ হিসাবে দেখা হয়। তিনি ছোটবেলায় পড়ালেখায় মনোযোগী ছিলেন না এবং ক্লাসে তার অবস্থান ছিল সবার নিচে। তাঁর প্রধান অবদানগুলো হলো- Universal Law of Gravitation, The Three Laws of Dynamics, Differential & Integral Calculus, The Binomial Theorem, The discovery of the colors of white light

 

গটফ্রায়েড উইলহেম ভন লিবনিজ

গটফ্রায়েড উইলহেম ভন লিবনিজ ( 1646-1716 ) ছিলেন জার্মানীর প্রতিভাবান ব্যক্তি যিনি একইসাথে আইন, দর্শন, ধর্ম, সাহিত্য, মেটা ফিজিক্স এবং গণিতে পণ্ডিত ছিলেন। তিনি নিজে নিজেই ক্যালকুলাস আবিস্কার করেন (নিউটনের পাশাপাশি সময়ে) এবং ক্যালকুলাসে ইন্টিগ্রাল চিহ্নটির ব্যবহার জনপ্রিয় করে তুলেন। তিনি বৃত্তের রেফারেন্স ছাড়াইএর মান বের করার একটি পদ্ধতি বের করেন। যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর উদ্ভাবনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাইনারি নাম্বার সিস্টেমের উন্নয়নেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

 

লিওনার্দ ইউলার

লিওনার্দ ইউলার (1707-1783) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন গণিতবিদ। তাকে টপলজির দাদা বলা হয়ে থাকে। তিনি উপলজির একটি বহুল ব্যবহারিক দিক গ্রাফ থিউরি আবিষ্কার করেন। তিনি গণিতের প্রায় সকল বিষয়ে অজস্র গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। তিনি গণিতের অনেক মৌলিক নোটেশন যেমন ইত্যাদি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ইউলার প্রায় 30 বছর বয়সে তার একটি চক্ষু হারায় এবং 59 বছর বয়সে সম্পূর্ণ অন্ধ হলেও অন্ধত্বের ফলে তার বৈজ্ঞানিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়নি।

 

মারিয়া এগনেসি

মারিয়া এগনেসি (1718-1799) ছিলেন ইতালির বিশ্ববিখ্যাত মহিলা গণিতবিদ। ছোটবেলা থেকেই তার জ্ঞানের কথা ছড়িয়ে পড়ে এবং তাকে ডাকা হতো 'ওরাকল অব দি সেভেন টাঙ্গস' তিনি কিশোরবেলায় নিজে নিজেই ডিসক্রিট, নিউটন, লিবনিজ, ইউলার এবং অন্যান্য বিখ্যাত গণিতবিদদের গণিত শিখে ফেলেছিলেন। তিনি গণিত বিজ্ঞান বিষয়ক অনেক সভার আয়োজন করতেন এবং এর উপর নির্ভর করে মাত্র বিশ বছর বয়সে তার বই বের হয়। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে তার অনেক অবদান ছিল। মহিলাদের মধ্যে তিনিই প্রথমে ক্যালকুলাসের উপর একটি বই লেখেন, এবং তিনিই প্রথম মহিলা যিনি অধ্যাপক হিসাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।

 

যোসেফ লুইস ল্যাগ্র্যাঞ্জ

যোসেফ লুইস ল্যাগ্র্যাঞ্জ (1736-1813) ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন, এনালাইসিস, নাম্বার থিউরি, এনালাইটিক্যাল সেলিস্টিয়াল মেকানিক্স বিষয়ে বেশ বড় ধরণের অবদান রাখেন। তিনি বিভিন্ন দেশে মেট্রিক সিস্টেম প্রবর্তনের কমিটির প্রধান ছিলেন। তিনি নিউটনের ইউনিভার্সাল অব গ্র্যাভিটেশন সূত্রটি প্রমাণে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

 

পিয়েরে সাইমন ল্যাপ্লাস

পিয়েরে সাইমন ল্যাপ্লাস (1749-1827) ছিলেন অনেক বড় মাপের ফরাসী গণিতবিদ। 1799 থেকে 1825 সালে পাঁচ খণ্ডে লেখা Mechanique Celeste এবং 1812 সালে প্রকাশিত Theorie analytique des probabilities বইগুলোর জন্য তিনি বিখ্যাত ছিলেন। এই দ্বিতীয় বই থেকেই আধুনিক প্রোবাবিলিটি থিউরির জন্ম হয়। ল্যাপ্লাস ট্রান্সফর্ম আজও প্রকৌশলীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

 

কার্ল ফ্রেডরিক গাউস

কার্ল ফ্রেডরিক গাউস (1777-1855) অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কথা বলতে পারার আগেই সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে পারতেন। ঊনবিংশ বিংশ শতাব্দীর প্রায় সকল গণিতের শুরু হয় গাউসের কাজ থেকে। তিনি ১৭ বছর বয়সে এলজেবরার ফান্ডামেন্টাল থিউরির সঠিক প্রমাণ দিয়েছিলেন। তাকে ডাকা হয় গণিতের রাজপুত্র (প্রিন্স অফ ম্যাথেম্যাটিক্স) নিউটন, আর্কিমিডিস গাউস - এই তিনজনকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসাবে দেখা হয়।

 

নিলস হেনরিক আবেল

নিলস হেনরিক আবেল (1802-1829) নরওয়েতে জন্ম গ্রহণ করেন। খুব অল্প বয়সেই তার গণিতের প্রতিভা ফুটে উঠে। তিনি তার ক্ষুদ্র জীবনের অনেকটা সময় এলজেবরার সমীকরণ সমাধানে নিয়োগ করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, পঞ্চম ঘাতের এলজেবরার সমীকরণ শুধু এলজেবরার অপারেশন দিয়ে সমাধান করা যাবে না। তিনি গ্রুপ কনসেপ্ট ব্যবহার করেন এবং তার নামানুসারে আবেলিয়ান গ্রুপ রয়েছে। আবেল দারিদ্র্যে জীবন কাটিয়েছেন এবং নরওয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তার ছবিসম্বলিত নরওয়ের নোট রয়েছে। তাছাড়া 2002 সালে থেকে তার নামে প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের আবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।

 

অগস্টা এডা বায়রন

অগস্টা এডা বায়রন (1815-1852) কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। তিনি দাবী করেছিলেন যে, এমন একটি মেশিন বানানো সম্ভব যা জটিল সঙ্গীত তৈরিতে, গ্রাফিক্স তৈরিতে এবং বৈজ্ঞানিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। একটি মেশিন কীভাবে বার্নুলি নাম্বার গণনা করতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে তিনি ব্যাবেজকে চিঠি লিখেছিলেন। এটাকেই ধরা হয় প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম। 1979 সালে তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমেরিকার ডিফেন্স বিভাগ এডা নামের একটি কম্পিউটারের ভাষা তৈরি করে।

 

জর্জ বুল

জর্জ বুল (1815-1864) লজিক শাস্ত্রে সিম্বল ব্যবহার করা শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি জটিল লজিক্যাল সমস্যাগুলোকে সেটের উপন নির্ভর করে সিম্বলিক আকারে প্রকাশ সমাধান করতে পারতেন। সেটের বেসিক অপারেশন ইউনিয়ন ইন্টারসেকশন বুলিয়ান এলজেবরা হিসাবে খ্যাত। বর্তমানে সাউন্ড রিজনিং এর ক্ষেত্রে বুলিয়ান এলজেবরা বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

জর্জ ক্যান্টর

জর্জ ক্যান্টর (1845-1918) হলেন বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ যিনি সেট থিউরির প্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে অনেক আধুনিক উন্নত গণিতের কাজের ভিত্তি হিসাবে এই সেট থিউরি ব্যবহৃত হয়। সেট থিউরিতে ক্যান্টরের অবদান তৎকালীন গণিতসমাজ সুনজরে দেখেনি এবং তাকে ভর্ৎসনাও করা হয়েছে যার ফলে তিনি হতাশায়ও ভুগেছেন। কিন্তু রয়্যাল সোসাইটি 1904 সালে গণিতের জন্য সর্বোচ্চ স্বীকৃতি সিল্ভেস্টার মেডাল প্রদান করে তার অবদানকে সম্মান জানিয়েছে।

 

গডফ্রে হার্ডি

গডফ্রে হার্ডি (1877-1947) ছিলেন ব্রিটেনের সমসাময়িককালের একজন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। বিশুদ্ধ গণিতে তার অনেক অবদানের মধ্যে এনালাইসিস এবং নাম্বার থিউরি হলো মনে রাখার মত। বিশুদ্ধ গণিতের উপরে তার লেখা বই (পিউর ম্যাথেম্যাটিক্স) ইংল্যান্ডে গণিত শেখায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। 1917 সালে তিনি বিখ্যাত গণিতবিদ রামানুজনের সাথে নাম্বার থিউরির উপর গুরুত্বপূর্ণ কাজ প্রকাশ করেন।

 

রামানুজন

রামানুজন (1887-1920) হলেন বিশ্ববিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ। তিনি নাম্বার থিউরিতে বিশাল অবদান রাখেন। তার মনে রাখার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি প্রথম 10000 পূর্ণসংখ্যার বৈশিষ্ট্য মনে রাখতে পারতেন এবং প্রতিটি সংখ্যা যেন তার খেলার সাথী হয়ে গিয়েছিল। একদা হার্ডি অসুস্থ রামানুজনকে দেখতে যে ট্যাক্সিতে আসেন তার নাম্বার 1729 কে বোরিং নাম্বার বললে রামানুজন সঙ্গে সঙ্গে বলেন সংখ্যাটি খুবই মজার। কারন এটাই হলো সবচেয়ে ছোট পূর্ণসংখ্যা যা দুইটি ঘনের যোগফল হিসাবে দুইভাবে প্রকাশ করা যায়, অর্থাৎ 1729 = 13 + 123 = 93 + 103 1

 

জন ভন নিউম্যান

জন ভন নিউম্যান (1903-1957) গেম থিউরির উপর কাজ করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞান লিনিয়ার প্রোগ্রামিং- তার অনেক অবদান রয়েছে। তিনি ম্যানিয়াক (MANIAC Mathematical Analyser Numerical Integrator and Computer) তৈরিতে সাহায্য করেন। তিনি এটম বোমা মিসাইল ডিজাইনের কাজেও সাহায্য করেন। আধুনিক কম্পিউটারের ভিত্তিই হলো ভন নিউম্যান আর্কিটেকচার।

 

পল আরডস

পল আরডস (1913-1996) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রতিভাবান হাঙ্গেরীয় গণিতবিদ। তিনি প্রায় 500 জনের সঙ্গে গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেছেন। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পূর্বেও তিনি একটি জ্যামিতির সমস্যা সমাধান করেন। তিনি গ্রাফ থিউরি, সেট থিউরি, নাম্বার থিউরি ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি 1500 এর অধিক গবেষণা পত্র রচনা করেন যার প্রায় 400 তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।

 

ডোনাল্ড আরভিন নুথ

ডোনাল্ড আরভিন নুথ (1938-) কে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনি এলগরিদমের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের জন্য গাণিতিক পদ্ধতিকে সমৃদ্ধ করেন। তার লেখা বই - The Art of Computer Programming, Concrete Mathematics এবং Scientic writing software Tex সারা পৃথিবীতে বহুল ব্যবহৃত। তিনি টুরিং পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বুদ্ধিমত্তার জন্য ছোটবেলা থেকেই তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

FOR MORE CLICK HERE



 

No comments:

Post a Comment